বার্বি পলিটিক্স ও বর্তমান সমাজ
বার্বি পলিটিক্স হলো এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার চর্চা করা যেখানে নারীদেরকে একটা নির্দিষ্ট গন্ডিতে বেধে রেখে দেয়া হয়। ইক্যুয়িটি বা সমঅধিকারে না আনার একটা প্রচেষ্টাকেই বার্বি পলিটিক্স বলা যায়।
ইতিহাসও সেই দিকেই ধাবিত হয় যেদিকে পাওয়ার বা ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়। সাহিত্যেও তার ব্যতিক্রম খুজে পাওয়া যায়না। তবে যুগের সাথে পরিবর্তন ঘটা একটি চিরন্তন বিষয়। তাই বিভিন্ন রেভ্যুলেশনের ভেতর দিয়ে এসবেরও পরিবর্তন ঘটছে এবং ক্রমাগত এটি চলবেই।
বার্বি পলিটিক্স নিয়ে আমাদের সমাজে খুব বেশী আলোচনা হয়না বললেই চলে। এবার আরোও একটু ভেঙে বলার চেষ্টা করি। আমরা যে বার্বি ডল গুলো দেখি, মূলত সেই বার্বি ডল থেকেই এই বার্বি পলিটিক্স এর নামকরণ করা হয়েছে। খুবই অবচেতন মনেই আমরা এই বার্বি পলিটিক্সের চর্চা করে থাকি। আপনি কি কখনো দেখেছেন একটা বার্বি ডল দেখতে কুৎসিত? এক কথায় উত্তর হবে না। বার্বি ডল গুলো এমন করেই প্রস্তুত করা হয় যা যে কারো নজর কাড়বে। আমরা রেনেসা বা নারী-পুরুষ সমঅধিকার নিয়ে প্রচুর আলোচনা হলেও এই বিষয়টি অত্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় রয়েই যায়। প্রশ্ন কিভাবে?
আমরা একজন ছেলে ও মেয়ে শিশুর জন্মের পরই তাদের সতন্ত্র ব্যক্তিত্ব ও অভ্যাসগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলি। একজন ছেলে বাচ্চার জন্য ক্রিকেট ব্যাট কিনলেও আমরা মেয়ে বাচ্চার জন্য তা কিনি না। তাদের বড় হবার সাথে সাথে তাদেরকে চর্চা করানো হয় কোন পোশাকে তাকে সুন্দর লাগবে, কি কি মেকাপ নিলে তাকে আরোও বেশী আকর্ষণীয় লাগবে ইত্যাদি। আর এই অবচেতন মনের অভ্যাস গুলো আয়ত্বে আনার মাধ্যমেই নারীদের এই বার্বি পলিটিক্সে পদার্পন ঘটে। অতঃপর সে নিজেই পুরুষ ও নারী কি কি কাজ করবে তার একটা তালিকা তার মনেই সৃষ্টি করে থাকে। আর এর সাথে যুক্ত হয় সমাজব্যবস্থা, সংষ্কৃতি এবং ধর্মিয় বিষয়াবলী।
আলোচনার সুবিধার্থে জনপ্রিয় AQUA ব্যান্ডের বার্বি ডল গানের লিরিক উল্লেখ করছি।
I'm a Barbie girl in a Barbie world
Life in plastic, it's fantastic.
You can brush my hair, undress me everywhere
Imagination, life is your creation
I'm a blond bimbo girl in a fantasy world
Dress me up, make it tight, I'm your dolly
You're my doll, rock'n'roll, feel the glamour in pink
Kiss me here, touch me there, hanky panky
You can touch
You can play
If you say "I'm always yours"
সাহিত্যে যে ক্রমাগত এর মেটামরফসিস ঘটেনি তা কিন্তু নয়। প্রাচীন সাহিত্যে শুধুমাত্র উচ্চশ্রেণীকে নিয়ে লেখা হলেও আধুনিক সাহিত্যে নিগৃহীত মানুষদেরকে নিয়ে লেখা হয়েছে। তাতে নারীদের প্রতিবাদমূখর হতেও দেখা গেছে। কিন্তু এই পরিবর্তনকে যদি মাপকাঠিতে আনা হয় তবে তা হাজার বছরের বিদ্যমান বার্বি পলিটিক্সের কাছে কিছুই না।
এই ক্রুয়েল পদ্ধতিকে যে নারী সমাজও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তার উদাহরণও অহরহ। তার প্রবৃত্তিতেও অনেকাংশে এটাই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে যে তাকে তাকে হতে হবে আরোও সুন্দরী, কথা বলায় অনন্য, হতে হবে আরো বেশী আবদনময়ী, থাকতে হবে সেক্সি লুক ইত্যাদি। আর সেই সাথে ব্যবসায়িক একটা স্বার্থ তো আছেই। ফর্সা হবার কসমেটিক্স ব্যবহারের প্রবণতা কিভাবে বাড়ছে? অবশ্যই এই বার্বি পলিটিক্স তার অদৃশ্যমান শক্তিকে ব্যবহার করে ফেলছে। অফিসের রিসিপশনে একজন পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যায় বেশী। কিন্তু বাইরের কাজে তো সেই সমঅধিকার চায়। মার্কেটিং বা ডেভেলপমেন্ট কাজে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা।
রাজলক্ষী, হৈমন্তী, বিলাসী চরিত্র তো সেই অবহেলিত, নিগৃহীত নারী সমাজের প্রতিচ্ছবি। মাতঙ্গিনীর মত ঘুরে দাড়ানো নারীর সংখ্যা তো খুবই কম। একবিংশ শতাব্দীতে এসে নারী স্বাধীনতা বাড়লেও তার বিপরীত শক্তির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেনি।
জুন ২২, ২০২০
ঝিনাইদহ।
Keywords: Birbie Politics, Gender Discrimination, Women Right, Equity, Social Weakness
0 Comments