টিথোনাস এবং মৃত্যুর আবশ্যকতা


Tithonus by Alfred, Lord Tennyson Role of Death

টিথোনাস

                                                             - আলফ্রেড, লর্ড টেনিসন


ইংরেজ কবি আলফ্রেড লর্ড টেনিসন (১৮০৯-১৮৯২) এর এক অনবদ্য সৃষ্টি টিথোনাস কবিতা। প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন চাহিদার মধ্যে মৃত্যুও যে একটি চাহিদা সেটা এই কবিতায় তিনি আলোকপাত করেছেন।

ট্রয় নগরীর এক সুদর্শন কিশোর, নাম টিথোনাস। টিথোনাসের প্রতি দৃষ্টি পড়ে গ্রিক পুরাণের ঊষাদেবী অরোরার। এই টকবগে সুদর্শন যুবকের প্রেমে পড়ে যান অরোরা। বিয়েও করতে চান টিথোনাসকে। সকল মিথোলজিতে দেব-দেবী অমর এবং চির যৌবনের অধিকারী।




টিথোনাস সাধারণ মানুষ, তার মৃত্যু অনিবার্য। অপরদিকে অরোরা অমর। তাই দেবী অরোরা তাকে বিয়ে করলে সে অমরত্বের বর প্রার্থনা করে। ভালোবাসার মানুষ যদি মারা যায় তবে অরোরা বেচে থেকে কি করবে? এই প্রশ্ন ভর করলো দেবী অরোরাও মনেও। তাই সে দেবরাজ জিউসের কাছে টিথোনাসের অমরত্বের বর প্রার্থনা করে এবং জিউস সে অনুরোধ মেনে নেন। কিন্তু দেবতারা কোন বর দিলে তা আর কখনোই ফেরত নিতে পারেন না।

টিথোনাস ও অরোরা বিয়ে করলেন। দেব রাজ্যে ভালোই চলছিলো তাদের দিন। প্রতিদিন সূর্যোদয়ে ঊষাদেবী অরোরা ষোল বছরের তরুণীর মত রূপ যৌবন লাভ করেন। আর সেই সৌন্দর্য তাদের সংসারে আগুন লাগার কারণ হয়ে দাড়ায়। আরোরা দেবরাজ জিউস এর কাছে অমরত্ব প্রার্থনা করলেও অনন্ত যৌবন প্রার্থনা করেননি। ফলাফলে টিথোনাসের মৃত্যু হয়না। বেঁচে থাকলেও প্রকিতির স্বাভাবিক নিয়মে ধীরে ধীরে বৃদ্ধ থেকে আরোও বৃদ্ধ হতে থাকে। একসময় সে জীবন্ত এক জড় পদার্থে পরিণত হয়। ষোল বছরের পুর্ন যৌবন প্রাপ্ত নারীর বৃদ্ধ স্বামী”। একদিকে আরোরা তাঁর কামবাসনার চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়ে বৃদ্ধ স্বামীর বোঝা বইছে। অপরদিকে শক্তিহীন বৃদ্ধ টিথোনাস দিন যাপন করছে নিদারুণ কষ্টে। মানুষ একসময় মারা যায়। কিন্তু টিথোনাস মারা যায় না। তার মরে যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা নেই। কারণ জিউসের বরে সে অমরত্ব লাভ করেছে। আর দেবতারা একবার বর প্রদান করলে তা ফেরত নেওয়ার ক্ষমতা স্বয়ং দেবতারও নেই। তাই যৌবনহীন টিথোনাসের মৃত্যুহীন যন্ত্রণা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। মানুষের জীবণে এই মৃত্যুর প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য এমন সাহিত্য খুজে পাওয়া বিরল।

কবিতার বঙ্গানুবাদটা আমি দৈনিক প্রথম আলো” পত্রিকা থেকে ধার করলাম।

”বনভূমি ঝরে যায়, ধসে পড়ে ঝোপঝাড়, অরণ্য উদ্ভিদ
বিমারি লোকেরও কান্না শেষ হয় মাটির কন্দরে
জমি উপড়ায়ে ফেলে চলে যায় চাষা
অতঃপর শুয়ে পড়ে ঘাসের চাপড়া গায়ে
জমিনেরই তলে। আর
বহুযুগ বেঁচে থেকে রাজহংসী মরে যায়
সাঙ্গ করে তার শেষ গান।
অথচ নিষ্ঠুর অমরতা এ আমাকে
তিলে তিলে গ্রাস করে।
ধরা থেকে বহু ঊর্ধ্বে মেঘের নিরালা পাড়ে
ক্ষয়ে যাই দেবী, আমি ক্ষয়ে যাই; তোমার বন্ধনে
আমি নিয়ত শুকাই।
শ্বেতমুণ্ড ছায়া হয়ে দুঃস্বপ্নের মতো হাঁটি
পূর্বাচলের তীরে চিরস্তব্ধ মহাশূন্য মাঝে।
কুয়াশার বিস্তীর্ণ পরলে ঢাকা প্রভাত প্রাসাদে
দিনের প্রথম সূর্যে আলোকিত অলিন্দে কোঠরে
হাঁটি আমি দুঃস্বপ্নের মতো—একা একা।”


Keyword: English, English Literature, World Literature, Criticism, Free Hand Writing

0 Comments