দুপুরে খাওয়ার পর একটা ভাতঘুম দেওয়ার চেষ্টা। চোখ দুটোয় বেশ ঘুম ধরবে ধরবে করছে। ঠিক এই সময়েই মোবাইলটা বেজে উঠলো। যন্ত্রের সুবিধা থাকার পাশাপাশি অসুবিধাও কম নয়। পদ্মিনীর ফোন। ও খুব ভালো করেই জানে ছুটির দিনে খাওয়ার পর আমি ঘুম দিই।
হ্যালো, কি করো?
- কি করবো, শুয়ে আছি। ফোন দিলে হঠাৎ....
হুম, একটু বের হতে হবে।
ভর দুপুরে, এই খা খা রোদে কই যাবা?
পদ্মিনীর এমন হুটহাট স্বভাব আমার আমার অজানা না। ভালো ভাবেই বুঝতে পারলাম এবার বের হতে হবে আমাকে। যদিও সন্ধ্যায় ঠিকই দেখা করতাম ওর সাথে।
- কই যাবো মানে, আমি রেডি, দশ মিনিটের মধ্যে হোস্টেলের সামনে আসো। শপিংয়ে যাবো।
ও, বিকালে গেলে তো ভালো হতো, এত গরমে..
আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল এখন মানে এখন। শপিং করতে সময় লাগে।
মনে মনে বলি, মাসের ২৬ তারিখ, বেতনটাও হাতে পায়নি। জানি আমাকে সে খরচ করতে বলবেনা। কিন্তু, সেটা তো আমি পারবোনা। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বলতে হলো, ঠিক আছে, আসছি।
ঘড়িতে ০২:২২। তিনটা দুই, এরকম ডিজিট সময় দেখতে খুব কমই চোখে পড়ে। ফোন রেখে রেডি হতে হলো। আমার নির্ধারিত সময় দশ মিনিট। হেটে হেটে পদ্মিনীর হোস্টেল পর্যন্ত যেতে ২:৫০ বেজেই গেল। ভ্যান থেকে কেনা সিলভার কালারের ঘড়িটা প্রায় দুবছর চলছে। সস্তার মাল অনেক দিন টিকলে মনে অানন্দই লাগে।
পদ্মিনীর হোস্টেলের সামনে এসে ফোন দিলাম।
হ্যালো, দাড়িয়ে আছি, কই তুমি?
হাপাতে হাপাতে উত্তর, দু মিনিট দাড়াও। চলে আসছি।
এই স্বভাবটা আমার একদমই পরিচিত। সব প্রেমিকদের প্রেমিকারই সময় জ্ঞান কম থাকে। মনে হয়, এ অভিযোগ আমার একার না। তবে আমার এই ধারণা ভুল হোক।
গেট দিয়ে বের হয়েই মিষ্টি করে হাসি। সরি, একটু লেট হয়ে গেল। তবে এতে আমি মোটেই অবাক হইনি। গত তিন বছর ধরে এমনই চলছে। যেহেতু আমি প্রেমিক, অলিখিত নিয়মে আমাকে রিক্সা ডাকতে হবে।
এই মামা, যাবা?
হ মামা। চলেন।
নিউমার্কেট চলেন।
পদ্মিনীর শপিং মানে তো নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, হকার্স মার্কেট বা আশে পাশে।
পদ্মিনীকে এতক্ষণ ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখিনি। সাদা ড্রেসটায় আজ যেন একটু বেশীই সুন্দর লাগছে।
তারপর বলো, রান্নাটা কেমন লাগলো?
বললাম ভালো। সকালে আমার বাসায় খাবারটা সেই পৌছে দিয়েছে।
শুধু ভালো?
এবার ডিটেল না বললে মনটা তার খারাপ হয়েই যাবে। হুম, তোমার রান্না তো বরাবরই ভালো লাগে আমার। ইলিশ ভাপাটা খুব বেশী ভালো লেগেছে।
তাই?
হুম, আবার রান্না করে দিয়ো।
আচ্ছা।
নিজের প্রশংসা শুনতে সবারই ভালো লাগে। এই ভর দুপুরে জ্যাম ভাল্লাগেনা। কি আর করা। পুরো ৪০ মিনিটের রিক্সা অভিযানে নিউ মার্কেট পৌছানো গেল। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে মার্কেটের দিকে হাটা শুরু করলাম। পদ্মিনী হাত ধরে থাকলো। টানা দুঘন্টা ধরে শপিং করার পর সে কিনতে পেরেছে একটা ওরনা আর জামার হাতায় লাগানোর জন্য এম্রোয়ডারি করা একটা নকশা। এটার কি নাম আমি ভুলে গেছি। আরো কিছুক্ষণ পর এটা সেটা কেনা শেষ হলো।
পদ্মিনী বলল, আজ আর বাসায় খেতে হবেনা। আজ বাইরে খাবো। এখন রবীন্দ্র সরোবরে চলো। ওর কথা মত রিক্সা নিয়ে রবীন্দ্রসরোবরে পৌছলাম। ঢাকার সন্ধ্যায় এই জায়গাটি আমারও বেশ প্রিয়। সন্ধ্যার সরোবর একটু বেশীই সুন্দর। দু কাপ চা নিয়ে পদ্মিনীর সাথে সময় কাটাতে আমার বেশ লাগে। চা শেষ। কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমাকে বলল, চলো এগোয়।
পদ্মিনীর কথা মত ঘরোয়াতে (রেস্টুরেন্টের নাম) বসলাম। ওর পছন্দের ডিস খাওয়াক আজ। আমি অর্ডার করিনি। শুধু বলে দিলাম যা খুশী নিতে পারো। পান্থশালার মত ঘরোয়ার মৃদু হলুদ আলোতে পদ্মিনীকে অন্যরকম লাগছে। ওর ডাগর চোখে কাজল দিলে আরো বেশী সুন্দর হয়ে ওঠে। হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
ওই! আমাকে দেখোনি? হা করে কি দেখছো? লোকজন হাসবে।
হা হা। সুন্দর লাগছে তোমাকে ভীষন, যদিও আরো একটু মোটা হয়ে গেছ। ছুটির এই একটা দিন ওর সাথে সময় কাটানো সময়টা কেমন যেন ধুম ধাম করে চলে যায়।
খাবারের বিল মিটিয়ে রাস্তায় নামলাম। রজনীগন্ধা বিক্রি করছে রাস্তায় একটা বাচ্চা মেয়ে।
মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, কত দাম?
স্যার পনেরো টাকা করে।
তিনটা দাও।
রজনীগন্ধার স্টিক কিনে পদ্মিনীর হাতে দিয়ে মেয়েটিকে ফুলের দাম দিলাম।
স্যার, পেত্যেকদিন আমার থোন ফুল লিবেন?
পোড়ার দেশ। মাত্র পাঁচ টাকা বেশী দিয়েছিলাম। আর তাতেই আপন করে নেয়ার চেষ্টা আর এইটুকু অনুরোধ। হয়তো এই ফুলগুলো বিক্রি না হলে হাড়িতে চালও উঠবেনা।
ঠিক আছে নেবো। এই কথা বলে পদ্মিনীকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম। এরই মাঝে দমকা হাওয়া, আকাশে মেঘের ঘনঘটা। পদ্মিনীর চুলটা আমার মুখে এসে পড়লো। একটা মিষ্টি ঘ্রান। কাধের উপর মাথা রেখে বসে আছে পদ্মিনী। মনে মনে বলছি ভালোবাসা ভালো থাক। ঠিক এসময়ই হাতের অাঙুলে একটা চিমটি। বিদায় বেলায় এটা ওর চির স্বভাব। মনের অজান্তেই কি ভাবে যেন একটা কাঁচের গ্লাসে ফোটা ফোটা রঙ পরতে শুরু করেছিলো। আর তা যেন আজ উপচে পড়ছে। কানে কানে বললাম, ক্যান আই কিস ইউ?
শয়তান, বলেই চিরচেনা একটা কিল। রিক্সা চলতে চলতে গলির ভেতর ঢুকলো। আকাশে মেঘটা আরো ঘন হয়ে উঠছে। পদ্মিনী মাথাটা আমার কাধে রাখলো। দু হাতে আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। যেন নির্লিপ্ত একটা শান্তি।
কাধের উপর ওর মাথা। রাস্তার মোড় ঘুরতেই আস্তে করে বলল, জায়গাটা বড্ড অন্ধকার।
ঝিনাইদহ
২৯ এপ্রিল ২০২০
Keywords: short story, story, literature, world literature, free hand writing
0 Comments